স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইলঃ
রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য মোঃ আমিরুল ইসলাম পারভেজের পরিচয় পাওয়া গেছে। এক কন্যা সন্তানের জনক
নিহত পুলিশ সদস্যে পারভেজের পূর্বের বাড়ি
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের চরকাটারী গ্রামে । গত চার বছর আগে যমুনা নদীতে বসতবাড়ি ভেঙ্গে গেলে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুরে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে তার পরিবার । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সাজ্জাদ হোসেন।
জানা গেছে, নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজ ২০১১ সালে পুলিশে যোগ দেন। তারা দুই ভাই। চাকুরির সুবাদে পারভেজ পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন। গ্রামের বাড়িতে তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও ভাই থাকে। ২০১২ সালে তিনি বিয়ে করেন। তাদের ঘরে ৬বছর বয়সী তানহা ইসলাম নামের একজন কন্যা সন্তান রয়েছে।নিহত পুলিশ সদস্য মোঃ আমিরুল ইসলাম পারভেজের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দার মোল্লা। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় ১০-১২ বছর আগে পুলিশের চাকুরী পান তিনি। পুলিশের চাকুরী পেয়ে পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যাক্তি হিসেবে বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় বোন ও ছোট ভাইসহ সকলের ভালবাসার মানুষ আর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিলেন পারভেজ।
বাবা বয়সের ভারে ন্যুজ। তাঁর চিকিৎসা,ঔষধ আর পরিবারের সকলের চাহিদা মিটিয়েও বেশ ভালোই ছিলেন সবাইকে নিয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে পারভেজ মেঝ। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাইটি বেকার।
তাঁর এ মৃত্যুতে দেশ ও পরিবারের জন্য এক অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে।এখন কে দেখবে তার অসহায় বাবা-মাকে?
পুলিশ সদস্য মোঃ আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু সংবাদে স্তব্ধ হয়ে গেছে তার পরিবার এ স্বজনেরা। এলাকায় চলছে শোকের মাতম। পারভেজ ছয় বছর বয়সী ছোট কন্যা শিশুটি অসহায় হয়ে দেখছে নিষ্ঠুর এ পৃথিবীর বর্বরোচিত নিষ্ঠুরতা। আর প্রাণপ্রিয় স্ত্রী!
হয়তো চোখের জলে বইছে আর এক যমুনা!
নিহত পুলিশ সদস্য মোঃ আমিরুল ইসলাম পারভেজের মামা আঃ মান্নান জানান, আমার বোনের তিন সন্তানের মধ্যে পারভেজ মেঝ এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। তার মৃত্যুতে পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। পারভেজের বাবা বয়সের ভারে ন্যুজ। ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না। কাউকে ঠিকমত চিনতেও পারেন না। তার ছোট ভাইটিও বেকার। নদীতে বারবার বসতবাড়ি ভাঙনের ফলে তারা এমনিতেই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। এ আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারটি খুবই অসহায় হয়ে পড়লো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন তিনি যেন নিহত পারভেজের ছোট ভাইটি একটি চাকুরির ব্যবস্থা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ পরিবারটিকে সাহায্য করেন।
উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম ফিরোজ সিদ্দিকী বলেন, সংঘর্ষে নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। ওই পুলিশ সদস্যের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের তাদের বসতভিটা হারিয়ে পার্শবতী দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে বসবাস করেন। ফয়েজপুরে বসবাস গড়ে তুললেও এখনও তারা দৌলতপুর এলাকার ভোটার।
জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ওই পুলিশ সদস্যের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকায় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। নিহতের পরিবার যেভাবে চাইবে সেইভাবে হবে। শোক তার জানাযা নামাজ ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোসহ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া মরহুমের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।