স্টাফ রিপোর্টারঃ
টাঙ্গাইলে আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিরাজ করছে এ পরিস্থিতি। হতদরিদ্ররা তো বটেই মধ্যবিত্ত মানুষেরও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চাহিদার অর্ধেকও শাকসবজি তারা কিনতে পারছে না।
এমন পরিস্থিতিতে দাম নিয়ন্ত্রণের যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্টরা নিরব আর এ সুযোগে আড়তদাররা বলছেন আমদানি না থাকায় বেড়েছে দাম। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলু ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০, পটোল ৬০-৭০, করলা ৮০-১০০, ঢ্যাঁড়শ ৬০-৮০, ঝিঙে ৬০-৭০, পেঁপে ২৫-৩০, ধুন্দল ৫০-৫৫, বাঁধাকপি ৬০-৮০, ফুলকপি ১২০-১৫০, মরিচ ১৮০-২০০, বরবটি ১০০-১১০, মিষ্টিকুমড়া ৪০-৫০, পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ আকারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টাঙ্গাইল শহর এলাকার বাস করেন খোরশেদ আলী। পেশায় রিকশাচালক। তিনি বলেন ,স্ত্রী-সন্তানসহ চারজনের সংসার তার। দিনে গড়ে ছয়শ থেকে আটশত টাকা আয় করেন।এর মধ্যে রিকসা জমা চারশত টাকা। বাকী দুইশ বা চারশত টাকা যা থাকে তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কেনার পর আর সবজি কিনতে পারেন না। এক কেজি আলু ৫০ টাকা। বেগুন ৮০ টাকা। এভাবে চলা সম্ভব না। খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। আক্ষেপ করে বলেন, মাছ-মাংস-ডিম কতদিন খান না তা মনে নেই।
ছয়আনি তুলাপট্টি এলাকায় ফুটপাতে কলা বিক্রি করেন আব্দুর রহমান। তার কাছে সংসার কীভাবে চলছে জানতে চাইলে কেঁদে ফেলেন। বলেন, দিনে এক থেকে দেড়শ টাকা আয় করেন। পাঁচজনের সংসার কীভাবে চালাবেন। শাকসবজির যে দাম, কাছে যাওয়া যায় না। চাল, ডাল, মসলা তো পড়েই রইল। একটা ডিম খাইনা কতদিন তা মনে নেই। মাছ মাংসতো দূরে থাক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত এক চাকুরীজীবি জানান জানান, তিনি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন। তাঁর আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। যা বেতন পাই তা থেকেই বাসা ভাড়া,সারা মাসের খরচ সবকিছু মিলিয়ে আর চলে না ভাই। এক সপ্তাহ ধরে সবজি বলতে শুধু পেঁপে খাচ্ছি। আর সবচেয়ে কম দামে পেঁপে ছাড়া বাজারে আর কিছু নেই।
টাঙ্গাইল ছয়আনি বাজারের খুচরা তরকারি বিক্রেতা আজাহার আলী জানান, মাঝখানে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে আমদানি গেছে কমে। এরই প্রভাবে বেড়েছে দাম। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাম স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। দাম বাড়ার কারণে তাদের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। যার যতটুকু দরকার তারচেয়ে অনেক কম নিচ্ছে। আধা কেজি করে দুই রকম তরকারি কিনতেই লাগছে একশ টাকা।
টাঙ্গাইলের পার্ক বাজারের একাধিক আড়তপট্টির মালিকরা জানান– টাঙ্গাইলের চরাঞ্চল বা গ্রামাঞ্চল থেকে সব সবজি বাজারে আসে। কয়েকদিন ধরে সরবরাহ নেই। তাই দাম অনেক বেশি। এখানে তাদের করণীয় কিছু নেই। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে অল্প লাভে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন।
আলুর আড়তদার গণি মিয়া জানান, তারা রংপুর থেকে আলু কিনে আনেন। বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আলুর ওপর চাপ পড়েছে। যে কারণে বেড়েছে আলুর দাম। বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে আলু পাইকারি বিক্রি করছেন। প্রতিদিন তিনি চার হাজার কেজি আলু বিক্রি করেন।
টাঙ্গাইল জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, শাক সবজি টবজি আমাদের ব্যাপার না। আপনি কৃষি অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তারা আপনাকে কত আমদানি বা মজুদ এ সমন্ধে ধারনা দেবে।